সূচনা
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস, ইতিহাসের পরম্পরা। ডাক তিনি দিয়েছিলেন একই সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তির। সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিল জাতি হিসেব বাঙালি। বীরের মতো লড়াই করে স্বাধীন ভূখন্ড অর্জন করেছে। বিশ্ব মানচিত্রে সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম আজও শেষ হয়নি।
বংগবন্ধুকে নিয়ে আমার ভাবনা এবং অনুভুতি
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুংগীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলা কেটেছে গ্রামের কাদা-জল, মেঠো পথ আর প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে। পরোপকার আর অন্যের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সবসময় তিনি নিজেকে জড়িয়ে নিতেন। আমি তার শৈশবের প্রসঙ্গে জেনেছি যে তিনি নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। তিনি যে একদন মহামানবে পরিণত হবেন এই ঘটনার মাধ্যমেই তা বোঝা যাচ্ছিল।
আমার দৃষ্টিতে তিনি আজও কেন গুরুত্বপূর্ন
আমি তার জীবনী পড়ে জেনেছি যে তার রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে। তারপর থেকে লেখাপড়া, রাজনীতি ও জনসেবা যুগপৎভাবে চলতে থাকে। তার জীবনী পড়ার মাধ্যমে আমি উৎসাহ পেয়ে থাকি কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় এবং সেইসাথে পড়াশুনা চালিয়ে নিতে হবে। রাজনীতির মানুষ হয়ে রাজনীতির বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে ভেবেছেন বঙ্গবন্ধু- খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত- কোনো কিছুই তার চিন্তার বাইরে ছিল না। তার নানাবিধ কর্মকান্ড এবং চিন্তার বিকাশ আমরা দেখি তার রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (২০১২), ‘কারাগারের রোজনামাচা’ (২০১৭) এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ (২০২০) প্রকাশের পর তাকে একজন লেখক হিসেবে চিনে নেয়ারও ঐতিহাসিক সুযোগ ঘটেছে আমার তার জীবনী পরেই জানতে পেরেছি যে কেবল মাত্র কোন এক পেশাতে যুক্ত থাকা মানেই যে আর অন্য কিছুতে যুক্ত থাকা যাবে না তা নয় একই সাথে আমাদের সকলের সমাজ , রাজনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তার থেকে আমাদের শিক্ষণীয় এই যে একজন মানুষের একই সাথে কত পর্যায়ে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
যে কারনে আমি বঙ্গবন্ধুর গুণমুগ্ধ
বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি তার যে ভালোবাসা তা আমাকে বিস্মিত করে। আমরা তাকে যেমন ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থাকতে দেখেছি, ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো ছাড়াও তিনি বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ চান আবার তেমনি তাকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান দেখেছি মাতৃভাষা নিয়ে গর্ব করতে শিখেছি। তাই অন্নদা শঙ্কর রায় লিখেন-
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমানততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান,তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহম'ন।’
সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন তার শুধু স্বপ্নই ছিল না। নিজেকেও তৈরি করেছিলেন সেই স্বপ্ন পূরণের হাল ধরার জন্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দিক নির্দেশক হিসেবে তিনি মূল্যায়িত হয়েছেন একাত্তর সালে। তাই স্বাধীনতার পুণ্যলগ্নে একাত্তরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক প্রফেসর মাহমুদ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘উপমহাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসেও এমনটি আর আসেনি। যেন এ অলৌকিক ঘটনা। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় পুঁজি এই সততা ও সাহসই তাকে বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালিতে পরিণত করেছিল।
আমার জীবনে তার প্রভাব
আমি মনে করি যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বাঙালিদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না”। আজ তার সে বাণী বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে।দেশের সীমানা পেরিয়ে বহিঃবিশ্বে তার একটি মহান ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল। তিনি হয়েছিলেন বিশ্ব বরেণ্য নেতা।
উপসংহার
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বঙ্গবন্ধুকে একজন আদর্শের নায়ক হিসেবে মনে করি যাকে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে অনুসরণ করা যায়। আমরা সবসময় চেয়েছি কারো কাছে হাত পেতে নয়, নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নেবো। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো।
No comments:
Post a Comment